প্রাচীন ভারতের
ধর্মগ্রন্থ গুলি তে দেবরাজ ইন্দ্রের নানা কাহিনী এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে আছে , সেখানে
ইন্দ্র হলেন অনেক দেবতাদের মধ্যে একজন প্রধান দেবতা । কিন্তু পরবর্তী পুরান গুলিতে
প্রাধান্য অনেক খানি খর্ব করা হয়েছে , পৌরাণিক যুগের প্রধান দেবতা হলেন ব্রহ্মা ,বিষ্ণুমহেস্বর।এই সময়কার ইন্দ্র হলেন একজন সাধারন
দেবতা , যদিও অন্যান্য ছোট খাট দেবতাদের উপর তিনি কিছুটা প্রভুত্ব খাটাতেন ।
জে সীমিত স্বর্গে
তিনি নিজের রাজত্ব চালাতেন তাকে বলাহত দেবলোক বা ইন্দ্রলো ক , অমরাবতী ছিল ঐ স্বর্গের
রাজধানী , পুরাণের ইন্দ্র ছিলেন দোষে গুনে এক অদ্ভুত দেবতা , তাঁর অনেক দোষের
মধ্যে একটি বড় দোষ ছিল অপরকে ঈর্ষা করা । কথাও কোনও মুনি ঋষি ধ্যানে বসলে তাঁর মনে
ভয় ঢুকে জেত,এই বুঝি তাঁর সিংহাসনের একজন দাবিদার এসে গেল , ব্রহ্মা বিষ্ণু
মহেস্বর ভক্তদের অনুরোধ সচরাচর ঠেলতেন না
, কি জানি তাঁরা যদি কাউকে এমন বর দিয়ে বসেন, যাতে তাঁর হাত থেকে রাজ দণ্ড টি খসে
পড়ে ।
এই বইতে ইন্দ্রকে
নিয়ে ৪ টি গল্প দেওয়া হয়েছে সেগুলি কিছুটা সতন্ত্র ,এইসব কাহিনীতে তাঁর ধূর্তামি
শুধু নয় , একটু উদারতাও প্রকাশ পেয়েছে , দেবরাজ ইন্দ্রই কিন্তু এই চারটি কাহিনীর
নায়ক নন , অধিকাংস কাহিনীর প্রধান চরিত্র আমরা অন্যত্র খুঁজে নিতে পারি ।
এই ৪ টি গল্পই
মহাভারত থেকে নেওয়া হয়েছে ,গল্পগুলি যুগোপযোগী করে তলার জন্য কিছু সামান্য
পরিবর্তন করেছেন ।
জামশেদজি নসরওয়ানজি টাটা, দেশ-এর বিখ্যাত শিল্পপতি, 03 মার্চ, 1839-এ
দক্ষিণ গুজরাটের একটি ছোট শহর নাভসারিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর
বাবা-মা'র নাম ছিল নাসরওয়ানজি টাটা এবং জীবনবাই। শহরটি তখন বরোদা রাজ্যের
অংশ ছিল। জামশেদজি টাটার বাবা, নাসরওয়ানজি টাটা, পার্সি পুরোহিত পরিবারের
অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। পরিবারটি 25 প্রজন্ম ধরে পুরোহিত হিসাবে কাজ করে এসেছে।
কিন্তু পরবর্তীতে তারা ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বোম্বেতে চলে আসে।তিনি একজন ছোট ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং সফল হন। 1852 সালে,
জামশেদজির বয়স যখন মাত্র 13 বছর, তাঁর বাবা তাঁকে বোম্বে ডেকে এনে একটি
স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করেন। জামশেদজি টাটা 29 বছর বয়স পর্যন্ত তার বাবার
ব্যবসায় কাজেই যুক্ত ছিলেন এবং তারপরে 1868 সালে 21,000 টাকা মূলধন নিয়ে
একটি ট্রেডিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তথ্য অনুযায়ী, খুব ধনী হওয়া
সত্ত্বেও টাটা খুব সাধারণ মানুষ ছিলেন। মুম্বাইতে তার বাড়ি, এসপ্ল্যানেড
হাউস, তার দূরের আত্মীয়সহ পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সবসময় অবারিত দ্বার
ছিল।তিনি সন্তানদের সাথে নম্র আচরণ করতেন। কিন্তু তিনি কখনই সন্তানদের সময় বা
অর্থ অপচয় করতে দেননি। তিনি পার্সি নীতিতে 'হুমতা' অর্থাৎ ভালো চিন্তা,
'হুক্তা', ভালো কথা এবং 'হুওয়ারশতা' অর্থাৎ সৎকর্মে বিশ্বাস করতেন। সম্পদ
থাকা সত্ত্বেও এবং উচ্চ সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, তিনি কখনও মদ বা অন্য
নেশা করেননি।জওহরলাল
নেহেরু তাঁকে 'আধুনিক ভারতের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তাঁর একাধিক ব্যবসা থাকলেও, তিনি লৌহ ইস্পাত শিল্পের জন্য ভারতে নিজেকে অমর
করে রেখেছেন। তাঁর হাতেই গড়ে উঠেছিল আজকের জামশেদপুর শহর। টাটা আয়রন ও
স্টিল গড়ে তুলেছিলেন তিনি।প্রচন্ড খাটুনিতে 1900 সালেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন টাটা। জার্মানিতে একটি
বাণিজ্যিক সফরে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। 1904 সালের মৃত্যু হয় তাঁর।
কোহিনুর
- এই হীরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন রাজবংশের উত্তরাধিকারের সম্পর্ক,
জড়িয়ে আছে মৃত্যু ও ধ্বংসের ইতিহাস, জড়িয়ে আছে সৌন্দর্য। এই রত্নটি যে কেবল
প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে আছে তাই নয়। এটা চুরি হয়েছে, এটা নিয়ে লড়াই
হয়েছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে মৃত্যু এবং বঞ্চনার ইতিহাসের কারণে এই হীরাকে
'অভিশপ্ত' বলেন অনেকে।
একশো পাঁচ ক্যারেটের ডিম্বাকৃতির এই কোহিনুর পৃথিবীর সবচেয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত হীরা।
এই
মূল্যবান হীরাটি অনেকবার হাত বদল হয়েছে। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই হীরাটা
চলে যায় ব্রিটিশদের দখলে। এটি মুঘল শাহজাদা, ইরানী যোদ্ধা, আফগান শাসক
এবং পাঞ্জাবি মহারাজাদের হাত ঘুরে স্থান পেয়েছে টাওয়ার অব লন্ডনে।
ক্রাউন জুয়েলসে থাকা ২৮০০টি মূল্যবান রত্নগুলোর মধ্যে একটি হলো কোহিনুর।
কিন্তু এটা সবসময় এই জায়গায় ছিল না।
কালের বিবর্তনে কোহিনুর নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক গল্প। অনেক ইতিহাসের সঙ্গে অনেক পুরাণ কথার সাক্ষীও জড়িত এই হীরার সঙ্গে।
হীরাটি ছিল রানী ভিক্টোরিয়ার বিশেষ সম্পত্তি, তিনি মূলত একটি ব্রোচ হিসেবে পরতেন এটি।
এবং শেষ পর্যন্ত এটি ক্রাউন জুয়েলসের অংশ হয়ে ওঠে।
এটি সর্বপ্রথম জনসমক্ষে দেখা যায় ২০০২ সালে, কুইন মাদারের মৃত্যুর পর তার কফিনের ওপরে।
বহু ভারতীয় বিশ্বাস করেন এই হীরা ব্রিটিশরা তাদের দেশ থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে।
২০২২ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরেই টুইটারে কোহিনুর শব্দটি ট্রেন্ড করা শুরু করে।
বহু ভারতীয় হীরাটি ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
উইলিয়াম
ডালরিম্পল ও অনীতা আনন্দ তাদের রচিত “কোহিনুর: দ্য স্টোরি অব্য দ্য
ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ইনফেমাস ডায়মন্ড” নামের বইটিতে এই হীরা নিয়ে যেসব মিথ
প্রচলিত আছে সেগুলো নিয়ে লিখেছেন।
কোহিনুর ঘিরে মিথ প্রচলিত
১৮৪৯
সালে কোহিনূর যখন তৎকালীন ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ডালহৌসির হাতে আসে,
তখন তিনি সেটি রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি নেন।
হীরাটি
যে ঠিক কত মূল্যবান, তাও রানীর সামনে তুলে ধরার কথা ভাবলেন লর্ড ডালহৌসি।
তাই তিনি ঠিক করলেন, হীরাটির সাথে এর একটি আনুষ্ঠানিক ইতিহাসও পাঠাবেন
তিনি।
সেই
অনুযায়ী তিনি নিয়োগ দেন দিল্লির একজন জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট
ম্যাজিস্ট্রেট, থিও মেটক্যাফকে। মেটক্যাফের কাজ ছিল কোহিনুরের ইতিহাসের উপর
গবেষণা করা, এবং সেই গবেষণার উপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা।
কিন্তু
তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ইতিমধ্যেই কোহিনুর সম্পর্কে যেসব
গল্পকথা প্রচলিত ছিল, সেগুলোই তিনি তার প্রতিবেদনে আবার উল্লেখ করেন। অথচ
তার সেই প্রতিবেদনটিকেই রেফারেন্স হিসেবে ধরে এরপর থেকে হাজার হাজার নতুন
আর্টিকেল ও বই প্রকাশিত হয়েছে, নির্মিত হয়েছে বহু তথ্যচিত্রও।
ডালরিম্পল
ও আনন্দের লক্ষ্য ছিল, অতিরঞ্জন গল্পগুলো বাদ দিয়ে বাস্তব কিছু বের করে
নিয়ে আসা। এবং অনেক সমালোচক বলেন সেই কাজটি তারা বেশ ভালোভাবেই করতে
পেরেছেন। বর্তমানে কোহিনূরের প্রকৃত ইতিহাস জানতে অনেকেই নির্ভর করছেন এই
বইটির উপরই।
এই বইয়ে কোহিনুর নিয়ে প্রচলিত কিছু মিথ সম্পর্কে লেখা হয়েছে, তার কিছু এখানে তুলে ধরা হলো।
মিথ ১- ভারতের শ্রেষ্ঠ হীরা
অনেকে
কোহিনুরকে ভারতের অন্যতম মূল্যবান হীরা মনে করলেও ইতিহাস ঘেঁটে গবেষকেরা
দেখেছেন ১৯০.৩ ক্যারেটের কোহিনুর যখন ব্রিটেনে আনা হয় তার সাথে সাথে
সাদৃশ্যপূর্ণ অন্তত আরো দুটি হীরার খোঁজ পাওয়া যায়।
একটি
হলো দরিয়া-ই-নূর যার অর্থ আলোর সাগর(১৭৫-১৯৫ ক্যারেট), এবং অপরটি হলো
“গ্রেট মুঘল ডায়মন্ড” হিসেবে পরিচিত অরলভ হীরা(১৮৯.৯ ক্যারেট)।
১৭৩৯ সালে ইরানী শাসক নাদির শাহ যে ধনসম্পদ লুট করেছিলেন সে সময় এই তিনটি হীরাই ভারতবর্ষ ত্যাগ করেছিল।
কেবল
উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে যখন কোহিনুর হাতবদল হয়ে আবার পাঞ্জাবে ফিরেছিল,
তখন থেকেই এটি সর্বশ্রেষ্ঠ হীরার তকমা পেতে শুরু করে, এবং এটা নিয়ে
বিশ্বব্যাপী আরও বেশি আগ্রহ তৈরি হয়।
মিথ ২: নিখুঁত হীরা
অনেকেই
মনে করেন, প্রকৃত কোহিনুর হয়তো একদম নিখুঁত ছিল। কিন্তু কোহিনুরের ওপর
অনেকগুলো হলুদ রঙের দাগ ছিল। কয়েকটি দাগ এত বড় ছিল যে, সেগুলোর কারণে
হীরাটি ঠিকভাবে আলো প্রতিফলনের ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছিল।
সে কারণেই রানী ভিক্টোরিয়ার স্বামী, প্রিন্স অ্যালবার্ট এত বেশি আগ্রহী ছিলেন হীরাটিকে নতুন করে কাটানোর জন্য।
আরেকটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোহিনুর বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা তো নয়ই, এটার
অবস্থান বিশ্বের বৃহত্তম হীরার ধারেকাছেও নেই। এর অবস্থান ৯০তম। ফলে,
টাওয়ার অব লন্ডনে ঘুরতে যাওয়া অনেক পর্যটককে এর আকৃতি দেখে অবাক হতে দেখা
যায়।
কারণ কোহিনুর হীরার ঠিক পাশেই রাখা দুটি কালিনান হীরার সাথে তুলনা করলে কোহিনুরকে অনেক ক্ষুদ্রাকৃতির বলেই মনে হয়।
মিথ ৩: ভারতের কোল্লুর খনি থেকে এসেছে
অনেকেই
দাবি করে থাকেন, কোহিনুর হীরাটি ত্রয়োদশ শতকে ভারতের কোল্লুর খনিতে পাওয়া
যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কবে, কোথায় এটা উত্তোলন করা হয়েছে, সে ব্যাপারে
নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। এবং এই অনিশ্চয়তাই একে বেশি রহস্যময় করে তুলেছে।
অনেকেই
আবার বিশ্বাস করেন, কোহিনুর কৃষ্ণকে নিয়ে রচিত ভগবদ পুরাণের সেই সিমন্তক
মণি। এবং মজার ব্যাপার হলও থিও মেটক্যাফের প্রতিবেদনেও এ বিষয়ে উল্লেখ করা
হয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘কৃষ্ণের জীবদ্দশাতেই উত্তোলিত হয়েছিল
কোহিনুর হীরা’।
কিন্তু
ডালরিম্পল ও আনন্দের বইটিতে জোর দিয়ে দাবি করা হয়েছে, কোহিনুর কোনো খনি
থেকে উত্তোলন করা হয়নি, এটা সম্ভবত দক্ষিণ ভারতের কোনো শুষ্ক নদীপৃষ্ঠ থেকে
তোলা হয়েছে।
মিথ ৪: কোহিনুর ছিল মুঘলদের মূল্যবান ধন
হীরা
যে এক মহামূল্যবান রত্ন এ কথা কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বিশেষত
হিন্দু ও শিখদের কাছে এটি অমূল্য রত্ন। কিন্তু মুঘল ও ইরানীদের ক্ষেত্রে
কিছুটা ভিন্ন। তারা হীরার থেকেও বেশি পছন্দ করত বৃহৎ, নিখুঁত, উজ্জ্বল রঙের
পাথর। আর সেজন্যই কোহিনুর হীরাকে মুঘলদের সবচেয়ে মূল্যবান ধন বলে যে দাবি
করা হয়, তা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন না অনেক গবেষক।
মুঘলদের
রাজকোষে ছিল বহু ধরনের মূল্যবান ধন-সম্পদ। কোহিনুর হীরা সেগুলোরই একটি।
কিন্তু মুঘলরা সবচেয়ে বেশি অধিগ্রহণ করেছিল যেটি, তা হীরা নয়। বরং তাদের
বেশি ঝোঁক ছিল বাদাখশানের লোহিতক ও বার্মার পদ্মরাগমণির ওপর।
কোহিনুর
বা হীরার প্রতি মুঘলদের যে উদাসীনতা ছিল তা প্রমাণিত হয় আরেকটি ঘটনা
থেকেও। কথিত আছে, নির্বাসিত থাকাকালে মুঘল সম্রাট পারস্যের শাহ তাহমাসপকে
উপহারস্বরূপ ‘বাবরের হীরে’ বলে যে হীরাটি দিয়েছিলেন, সেটি নাকি আসলে
কোহিনুরই ছিল।
বাবরের
হীরা পরে আবার দক্ষিণে ফিরে এসেছিল, কিন্তু ঠিক কবে বা কীভাবে আবার মুঘল
রাজদরবারে এর প্রত্যাবর্তন ঘটে, তা আজও স্পষ্ট জানা যায়নি।
মিথ ৫: পাগড়ি বিনিময় ও কোহিনুর দখল
এ
গল্পটা বহুল জনপ্রিয় যে , মোহাম্মদ শাহ রঙ্গিলা নাকি তার পাগড়ির ভিতর
কোহিনুর লুকিয়ে রাখতেন। এ কথা জেনে যান নাদির শাহ এবং তিনি এক কৌশল বের
করেন। তিনি মোহাম্মদ শাহকে একটি প্রাচীন রীতির কথা মনে করিয়ে দেন যে দুই
বাদশাহ পরস্পর দেখা হলে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে পাগড়ি বিনিময়
করবেন।মোহাম্মদ শাহের বুঝতে বাকি ছিল না, নাদির শাহ আসলে হীরাটি ছিনিয়ে
নিতে চাইছেন।
অথচ
তৎকালীন পরিস্থিতিতে পাগড়ি বিনিময়ে অস্বীকৃতির মাধ্যমে নাদির শাহের
বন্ধুত্বের আহ্বান ফিরিয়ে দেয়াও তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই তিনি বাধ্য হন
পাগড়ি বিনিময় করতে। এভাবে পাগড়ি ও কোহিনুরের মালিক বনে যান নাদির শাহ।
কিন্তু
পারস্যের ইতিহাসবিদ মারভি বলছেন, বাস্তবে মোহাম্মদ শাহের পক্ষে হীরাটি তার
পাগড়িতে লুকিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। সেই সময়ে কোহিননুর ছিল সর্বকালের
সবচেয়ে সুন্দর ও মূল্যবান হীরা, শাহজাহানের ময়ূর সিংহাসনের মাঝে হীরাটি
দ্যুতি ছড়াচ্ছিল।
অনেক
গবেষকের মতে, এর দ্যুতি এতটাই মুগ্ধকর ছিল যে এটি মুঘল শাসক শাহজাহানের
রুবি, পান্না ও মুক্তাখচিত ময়ূর সিংহাসনেও যুক্ত করা হয়েছিল এবং এই হীরাটি
বহু বছর শাহজাহানের সিংহাসনে দীপ্তি ছড়িয়েছে।
সিংহাসন তৈরির পর মুঘলরা এক শতাব্দী ধরে ভারতবর্ষে ক্ষমতায় ছিল।
কিন্তু দেশটির ব্যাপক সম্পদ বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত হয়ে ওঠে এবং পারস্যের শাসক নাদির শাহ ভারতবর্ষে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
১৭৩৯
সালে তিনি দিল্লিতে প্রবেশ করেন এবং লুট করেন দিল্লির ধন-সম্পদ। যেগুলো
নিজ দেশে নিয়ে যাবার জন্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন ৭০০টি হাতি, ৪ হাজার উট
এবং ১২ হাজার ঘোড়া।
লুণ্ঠিত সম্পদের মধ্যে ছিল সিংহাসনটি, এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ভারতবর্ষ ছাড়ে কোহিনুর।
সিংহাসন থেকে কোহিনুর হীরাটি সরিয়ে একটি আর্মব্যান্ডে সেটি স্থাপন করেন শাহ, যা তিনি সবসময় তার হাতে পরতেন।
এরপর হাত বদল হয়ে হীরাটি যায় আফগানিস্তানে, শাসকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পার করে সেখানে ৭০ বছর ছিল হীরাটি।
১৮১৩ সাল নাগাদ, এটি ভারতে ফিরে আসে এবং শিখ শাসক রঞ্জিত সিংয়ের দখলে চলে যায়।
এরপর
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কোহিনুর হীরা নামে একটি অমূল্য সম্পদের
গুজব শুনতে পায় এবং এটি সংগ্রহ করার জন্য তারা চেষ্টা শুরু করে।
ভারতের
তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির কাছে হীরা ছিল ক্ষমতার চূড়ান্ত
প্রতীক। তিনি চেয়েছিলেন ভারতের রত্নের মালিক হোক ব্রিটেন।
মিথ ৬: কোহিনুর অযত্নে কাটা হয়েছিল
ফরাসি
রত্ন ব্যবসায়ী ও পর্যটক জন-ব্যাপ্টিস্ট ট্যাভারনিয়ার তথ্য অনুযায়ী, তিনি
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ব্যক্তিগত রত্নালঙ্কারের সংগ্রহশালা পরিদর্শনের
অনুমতি পেয়েছিলেন। ফরাসি এই রত্ন ব্যবসায়ীর ভাষ্যমতে, সম্রাটের ভাস্কর
হোর্তেনসিও বোর্গিও খুব বড় আকারের একটি হীরাকে ভুলবশত কেটে ফেলেছিলেন। এর
ফলে হীরাটির আকৃতি নষ্ট হয়ে যায় ও তা ছোট হয়ে যায়।
কিন্তু
তিনি ওই হীরাটিকে চিহ্নিত করেছিলেন ‘গ্রেট মুঘল ডায়মন্ড’ হিসেবে, যেটা
শাহজাহান হীরা ব্যবসায়ী মীর জুমলার কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলেন ।
একটা
সময় পর্যন্ত অনেকেই বিশ্বাস করত, ‘গ্রেট মুঘল ডায়মন্ড’ই হয়তো কোহিনুর।
কিন্তু বর্তমান সময়ের অনেক গবেষক একমতে পৌঁছেছেন যে, সেটা ছিল আসলে অরলভ
হীরা। যা বর্তমানে মস্কোর ক্রেমলিন জাদুঘরের অংশ হয়ে উঠেছে ও সেখানে
দীপ্তি ছড়াচ্ছে।
কোহিনুরের দীর্ঘ ইতিহাসে এটি অসংখ্যবার চুরি হয়েছে এবং স্থানান্তরিত হয়েছে। এর হাতবদলের ইতিহাস বড়ই বিচিত্র।
তাই এই প্রশ্ন এখনও থেকেই যায় পরবর্তীতে এই হীরাটি কোথায় যেতে পারে?
ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরানও এই মূল্যবান হীরার ওপর নিজেদের দাবি জানিয়ে আসছে।
বিশ্লেষকেরা বলে থাকেন এই হীরাটি হলো ‘বিজয়ী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধিপত্যের প্রতীক’।
তবে
এই হীরাকে ঘিরে যেই ইতিহাস ও বিতর্ক রয়েছে তা চলতে থাকবে। বিতর্কের কথা
ভেবে রাজা চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানেও ব্যবহার হচ্ছে না কোহিনুর হীরা।
আর তাই এ কথা বলাই যায় - বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সবচেয়ে বিতর্কিত হীরার ইতিহাস লেখা চলতে থাকবে যুগের পর যুগ।
অজাতশত্রু হর্য্যঙ্ক রাজবংশের রাজা বিম্বিসার ও কোশল রাজকন্যা চেলেনার পুত্র ছিলেন।
৯২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গৌতম বুদ্ধের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ বৌদ্ধ ভিক্ষু দেবদত্তের
প্ররোচনায় অজাতশত্রু বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক বিম্বিসারকে হত্যার
চেষ্টা করেন। বুদ্ধের মতাদর্শে বিশ্বাসী বিম্বিসার এই ঘটনায় তাঁর পুত্রকে
ক্ষমা করে দেন। কিন্তু পুনরায় দেবদত্তের প্ররোচনায় অজাতশত্রু বিম্বিসার
ও তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীকে গৃহবন্দী করে নিজেকে মগধের শাসক হিসেবে ঘোষণা
করেন। ৪৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গৃহবন্দী অবস্থায় বিম্বিসারের মৃত্যু ঘটে। এই
সময় দেবদত্তের প্ররোচনায় তিনি গৌতম বুদ্ধকে হত্যার চেষ্টা করেন। পিতার
মৃত্যুর পর অনুশোচনায় দগ্ধ অজাতশত্রু শান্তিলাভের আশায় বিভিন্ন ধর্ম
উপদেষ্টা ও দার্শনিকের শরণাপন্ন হন। কিন্তু তাঁদের উপদেশে শান্তিলাভে
ব্যর্থ হয়ে রাজবৈদ্য জীবকের উপদেশে গৌতম বুদ্ধের শরণাপন্ন হলে বুদ্ধ তাঁকে সামঞ্ঞফলসুত্ত ব্যাখ্যা করেন।
কোশলের সঙ্গে যুদ্ধ
বিম্বিসারের বন্দীত্ব ও মৃত্যুর ঘটনায় ক্রুদ্ধ কোশল রাজ প্রসেনজিৎ একদা উপহার হিসেবে প্রদত্ত কাশী রাজ্য পুনরায় নিজের অধীনে নিয়ে নিলে অজাতশত্রু কোশল রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। প্রথম যুদ্ধে তিনি বিজয়ী হলেও পরের যুদ্ধে পরাজিত হন। কিন্তু গৌতম বুদ্ধের মতাদর্শে বিশ্বাসী প্রসেনজিৎ তাঁকে মুক্ত করে তাঁর কন্যা বজিরাকে তাঁর সাথে বিবাহ দিয়ে যৌতুক হিসেবে কাশী রাজ্য ফিরিয়ে দেন।
বৃজি অধিকার
বুদ্ধঘোষের বর্ণনা অনুযায়ী, গঙ্গা নদীর তীরবর্তী একটি বন্দর এলাকার অর্ধেক অংশ অজাতশত্রুর অধিকারে এবং অর্ধেক অংশ বৃজি মহজনপদের অধিকারে ছিল। এই বন্দরের নিকটবর্তী একটি পাহাড়ে প্রাপ্ত গন্ধভাণ্ড নামক এক ধরনের সুগন্ধী দ্রব্যের অধিকার নিয়ে মগধ ও বৃজি মহজনপদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। বেশ কয়েক বার অজাতশত্রুর পূর্বেই লিচ্ছবিরা সম্পূর্ণ গন্ধভাণ্ড অধিকার করে নিজের দেশে চলে গেলে অজাতশত্রু প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ করেন। দীঘনিকায়েরমহাপরিনিব্বানসুত্ত অনুসারে, তিনি তাঁর মন্ত্রী বস্সকারকেগৌতম বুদ্ধের নিকট প্রেরণ করে লিচ্ছবিদের পরাজিত করার উপায়ের সন্ধান করতে বলেন। গৌতম বুদ্ধ মত দেন যে, যতদিন লিচ্ছবিরা
যতদিন সম্মিলিত ভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে আলোচনা করে একত্রিত ভাবে
মতগ্রহণ করবেন, নিজের দেশের আইন ও জৈষ্ঠ্যদের উপদেশ মেনে চলবেন, নারীদের
বিরুদ্ধে কোন হিংসামূলক অপরাধে জড়িত থাকবেন না, ধর্মস্থান ও অর্হতদের
সম্মান করবেন,। ততদিন কোন বৈদেশিক শক্তি তাঁদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
এই উপদেশের ফলে অজাতশত্রু এরপর সামরিক শক্তির বদলে লিচ্ছবিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে সফল হন এবং মগধের সেনা বৃজি মহজনপদ অধিকার করতে সক্ষম হয়।